বর্তমান যুগে ক্রেডিট কার্ড শুধু একটি আর্থিক সুবিধা নয়, বরং জীবনযাপনের অন্যতম প্রয়োজনীয় অংশ হয়ে উঠেছে। কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, অনলাইন সাবস্ক্রিপশন, ভ্রমণ বুকিং কিংবা জরুরি আর্থিক পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ড একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তবে যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। অনেকেই জানতে চান ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা কীভাবে নির্ধারিত হয় এবং কী প্রস্তুতি নিতে হবে।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়, কীভাবে নিজেকে যোগ্য করে তোলা যায়, এবং নতুন আবেদনকারীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
কেন ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন?
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আপনি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ঋণ নিয়ে তা পরবর্তীতে পরিশোধ করতে পারেন। এটি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদি আর্থিক সুবিধা, যেখানে আপনি শূন্য সুদে (গ্রেস পিরিয়ডে) অর্থ ব্যবহার করতে পারেন, আবার সময়মতো পরিশোধ করলে আপনার ক্রেডিট স্কোরও ভালো হয়। বিভিন্ন অফার, ক্যাশব্যাক, EMI সুবিধা ও আন্তর্জাতিক ব্যবহারের সুযোগ থাকায় ক্রেডিট কার্ডের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে।
তবে এই সুবিধা পাওয়ার আগে আপনাকে ব্যাংকের কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে।
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা কীভাবে নির্ধারণ হয়?
প্রতিটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব নীতিমালার ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে কিছু সাধারণ মানদণ্ড রয়েছে যেগুলোর ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়।
১. বয়সসীমা: সাধারণত ২১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়স সীমা ৬৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
২. আয়ের উৎস ও পরিমাণ: যেহেতু ক্রেডিট কার্ড একটি ঋণসুবিধা, তাই ব্যাংক দেখে আপনি কত আয় করেন এবং সেই আয় কতটা স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য। সাধারণত মাসিক আয় ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে হলে প্রাথমিক পর্যায়ের কার্ড পাওয়া সম্ভব।
৩. চাকরি বা ব্যবসার মেয়াদ: চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাসের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হয় এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ১ বছর স্থায়ী ব্যবসার প্রমাণ দরকার হয়।
৪. ক্রেডিট স্কোর বা ক্রেডিট হিস্টোরি: অতীতে আপনি যদি কোনো লোন নিয়ে থাকেন এবং সময়মতো পরিশোধ করে থাকেন, তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকবে। এটি ব্যাংকের আস্থার জায়গা তৈরি করে।
৫. জাতীয় পরিচয় ও ঠিকানার প্রমাণ: আবেদনকারীর পরিচয়, স্থায়ী ঠিকানা ও আর্থিক দিক নিশ্চিত করার জন্য NID, Utility Bill, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
ব্যাংকভেদে যোগ্যতা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে
যদিও উপরের বিষয়গুলো সাধারণ, তবে বিভিন্ন ব্যাংক বা NBFC (Non-Banking Financial Company) আলাদাভাবে কিছু বাড়তি শর্ত দিতে পারে। যেমন—কোনো ব্যাংকে শুধু তাদের একাউন্ট হোল্ডাররাই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন, আবার কিছু ব্যাংক পেশাগত পরিচিতি যেমন—চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা আইটি প্রফেশনালদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়।
তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা যাচাই করা হয় প্রোফাইল ও রিস্ক ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে। তাই আপনার আর্থিক অবস্থা ও ব্যাংকের নিয়মের সমন্বয় হওয়াটাই মূল।
উপসংহার
ক্রেডিট কার্ড এখন আর বিলাসিতা নয় বরং দৈনন্দিন আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটি বাস্তবসম্মত সমাধান। তবে এটি ব্যবহারে দায়িত্বশীলতা জরুরি, কারণ ভুল ব্যবহারে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে। তাই কার্ড নেওয়ার আগে আপনার আয়, খরচ ও পরিশোধ সক্ষমতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এই প্রেক্ষাপটে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে আপনি নিজের জন্য সঠিক কার্ড বাছাই করতে পারবেন এবং ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনাকে আরও সুশৃঙ্খল করতে পারবেন।